মুঘল সাম্রাজ্য [ জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর ]

.
.
জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক।পৃথিবীর ইতিহাসে মহান শাসকদের অন্যতম মহামতি আকবর নামেও পরিচিত। তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট। পিতা সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর পর ১৫৫৬ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে আকবর ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেণ। বৈরাম খানের তত্ত্বাবধানে তিনি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার সাম্রাজ্য বিস্তার করতে থাকেন। ১৫৬০ সালে বৈরাম খাঁকে সরিয়ে আকবর নিজে সকল ক্ষমতা দখল করেন। কিন্তু আকবর ভারতবর্ষ ও আফগানিস্তানে তার সাম্রাজ্য বিস্তার চালিয়ে যান। ১৬০৫ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় সমস্ত উত্তর ভারত তার সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে। আকবরের মৃত্যুর পর তার পুত্র সম্রাট জাহাঙ্গীর ভারতবর্ষের শাসনভার গ্রহণ করেন।
জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর

পারিবারিক জীবন:
সাম্রাজ্যের রাজপুতদের সাথে সুসম্পর্ক রাখার স্বার্থে আকবর বিভিন্ন রাজবংশের রাজকন্যাদের বিয়ে করেন। তবে তার স্ত্রীদের মধ্যে সবচাইতে আলোচিত হলেন যোঁধা বাঈ। হীরাবাঈ, ধর্ম:হিন্দু রাজস্থানের রাজপুতঘারানার রাজা ভারমালের জ্যেষ্ঠ কন্যা। হীরাবাঈ ১৫৪২ খ্রিস্টাব্দের পহেলা অক্টোবার জন্মগ্রহণ করেন।মৃত্যুবরণ করেন ১৯মে,১৬২৩ খ্রিস্টাব্দে,প্রায় ৮১ বছর বয়সে। তিনি রাজা ভগবান দাসের বোন ও রাজা মানসিং এর ফুপু ছিলেন। তিনি আকবরের ১ম রাজপুত স্ত্রী। সম্রাট আকবরেরসাথে তার বিবাহ হয় তিনি ১৫৬২ খ্রিস্টাব্দের ৬ই ফেব্রুয়ারী। তিনি শাহাজাদা সেলিমের অর্থাত্‍ সম্রাট জাহাঙ্গীরের মা। তার আসল নাম রাজকুমারী হীরা কুমারী। আবার তার নাম যোধাবাঈ ছিল নাকি তা নিয়ে বির্তক রয়েছে। তবে বিয়ের পরে তিনি মরিয়ম উজ-জামানী নাম ধারণ করেন। তিনি ছিলেন 'আমের' রাজ্যের রাজকুমারী। তাঁর মায়ের নাম হল 'ময়নাবতী' এবং তাঁর বোনের নাম হল 'সুকন্যা দাস'। তাঁর মৃত্যু হয়েছিল সম্ভবত ১৬২৩ খৃষ্টাব্দে।
আকবরের শাসনকাল:
.
.
আমলাতন্ত্র:
রাজ্য শাসনের জন্য আকবর আমলাতন্ত্র চালু করেন এবং প্রদেশগুলোকে স্বায়ত্বশাসন দান করেন। আকবরের আমলাতন্ত্র বিশ্বের সবথেকে ফলপ্রসু আমলাতন্ত্রের মধ্যে অন্যতম। তিনি প্রত্যেক অঞ্চলে সামরিক শাসক নিয়োগ দেন। প্রত্যেক শাসক তার প্রদেশের সেনাবাহিনীর দায়িত্বে ছিল। ক্ষমতার অপব্যবহারের শাস্তি ছিল একমাত্র মৃত্যুদন্ড।
অর্থনীতি:
আকবর বুঝতে পেরেছিলেন, যে রাজপুতরা শত্রু হিসাবে প্রবল, কিন্তু মিত্র হিসাবে নির্ভর। আকবরের শাসনকালে তিনি রাজপুতদের সাথে সন্ধি করার প্রয়াস করেছিলেন। কিছুটা যুদ্ধের দ্বারা, এবং অনেকটাই বিবাহসূত্রের দ্বারা তিনি এই প্রয়াসে সফল হয়েছিলেন। অম্বরের রাজা ভর মল্লের কন্যা জোধাবাঈ-এর সাথে তার বিবাহ হয়। ভর মল্লের পুত্র রাজা ভগবন দাস আকবরের সভায় নবরত্নের একজন ছিলেন। ভগবন দাসের পুত্র রাজা মান সিংহ আকবরের বিশাল সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি ছিলেন। রাজা টোডর মল্ল ছিলেন আকবরের অর্থমন্ত্রী। আরেক রাজপুত, বীরবল, ছিলেন আকবরের সবচেয়ে কাছের বন্ধু ও প্রিয়পাত্র। বেশিরভাগ রাজপুত রাজ্য যখন আকবরের অধীনে চলে আসছে, তখন একমাত্র মেওয়ারের রাজপুত রাজা মহারানা উদয় সিংহ মুঘলদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। চিতোরের পতনের পর তিনি উদয়পুর পালিয়ে গিয়েছিলে এবং সেখান থেকে রাজপুতদের একত্রিত করতে চেষ্টা করেন। তার পুত্র মহারানা প্রতাপ সিংহ সারা জীবন মুঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেছিলেন।প্রতাপ আকবরের আনুগত্য মেনে না নিলেও, চিত্ত্বর দুর্গে আকবর আক্রমণ করার পর তারা পালিয়ে যায় এবং আর কখনো রাজ্য স্থাপন করতে পারে নি। এবং রাজপুতদের কখন একত্রিতও করতে পারেননি। এছাড়াও প্রতাপ সিং চিত্ত্বর দুর্গ পুনঃরুদ্ধার করতে পারেন নি। মেওয়ারের রাজপুতরাই একমাত্র রাজপুত জাত যারা রাজ্য হারিয়ে ভিখারি হয়েছে তবুও আকবরের প্রতি আনুগত্য মেনে নেয় নি।
বাংলা শাসন ব্যবস্থা: 
.
.
আকবরের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি:
আকবর তার নিজস্ব ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দীন-ই-ইলাহি নামক ধর্ম চালু করার চেষ্টা করেন। দীন-ই-ইলাহি, (ফার্সি: دین الهی‎‎ lit. "ঈশ্বরের ধর্ম") উচ্চারনভেদে দ্বীন-এ এলাহী ১৫৮২ সালে সম্রাট আকবর প্রবর্তিত একটি ধর্ম। তিনি ধর্মীয় বিষয়ে গবেষণার জন্য ১৫৭৫ খ্রী আকবর ফতেপুর সিক্রিতে একটা উপাসনা ঘর তৈরী করেন। যা 'ধর্ম সভা' নামে পরিচিত। সেখানে তিনি বিভিন্ন ধর্মের পণ্ডিতদের কথা শুনতেন। অবশেষে সকল ধর্মের সারকথা নিয়ে তিনি নতুন একটি নিরপেক্ষ ধর্মমত প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই 'দীন-ই-ইলাহি' (১৫৮২) নামে পরিচিত। তৎকালীন সময়ের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা এই ধর্মমতকে ভালভাবে গ্রহন করতে পারেনি। অনেক ঐতিহসিক দীন-ই-ইলাহীকে নতুন ধর্ম বলতে অস্বীকার করেন। এই ধর্মমত সম্রাট আকবরকে বিতর্কিতও করে তুলেছিল। ফলশ্রুতিতে এই ধর্মমত তেমন প্রসার লাভ করতে পারেনি।
আকবরের নবরত্ন সভা:
আকবরের সভাসদ দের মধ্যে নবরত্ন হিসেবে যারা ইতিহাসখ্যাত হয়ে আছেন:
1. রাজা টোডরমল
2. তানসেন:
তানসেনের প্রতিকৃতি
মিয়া তানসেন (১৫০৬ - ১৫৮৯) প্রায় সকল বিশেষজ্ঞের ধারণা মতে উত্তর ভারতের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সঙ্গীতজ্ঞ। বর্তমানে আমরা যে হিন্দুস্তানী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সাথে পরিচিত তার মূল স্রষ্টা হলেন এই তানসেন। তার এই সৃষ্টি যন্ত্র সঙ্গীতের এক অনবদ্য অবদান। বহু প্রাচীনকালে সৃষ্টি হলেও এখন পর্যন্ত এর প্রভাব বিদ্যমান রয়েছে। তার কর্ম এবং বংশীয় উত্তরাধিকারীদের মাধ্যমেই মূলত এই ধারাটি আজও টিকে রয়েছে। তিনি মুঘল বাদশাহ আকবরের রাজদরবারের নবরত্নের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তাকে সঙ্গীত সম্রাট নামে ডাকা হয়। তানসেন ভারতের গোয়ালিয়রে এক হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মুকুন্দ মিস্ত্র ছিলেন একজন কবি। ছোটবেলায় তার নাম ছিল তনু মিস্ত্র। তার বাবা মূলত বিহাটের বাসিন্দা ছিলেন। ছেলের জন্মে তিনি অতি আনন্দিত হন এবং এই জন্মের পিছনে সাধু গাউসের আশীর্বাদ রয়েছে বলে বিশ্বাস করেন। ছেলের নাম রাখেন রামতনু (রামতনু মিস্ত্র)। ছোটবেলা থেকেই তানসেন সঙ্গীত শিক্ষা করতে শুরু করেন। এই শিক্ষায় তার গুরু ছিলেন বৃন্দাবনের তৎকালীন বিখ্যাত সঙ্গীত শিক্ষক হরিদাস স্বামী। মাত্র ১০ বছর বয়সে তার মেধার ক্ষমতা প্রকাশিত হয়। তার মেধা দেখে স্বামীজি বিস্মিত হন এবং তার বাবাকে বলে নিজের সাথে বৃন্দাবন নিয়ে যান। এই বৃন্দাবনেই তানসেনের মূল ভিত রচিত হয়। বিভিন্ন রাগের সুষ্ঠু চর্চার মাধ্যমে তিনি বিখ্যাত পণ্ডিত শিল্পীতে পরিণত হন। অনেক বিখ্যাত হওয়ার পরও তাই তিনি সময় পেলেই বৃন্দাবন আসতেন। বৃন্দাবন থেকে বিহাটে ফিরে তানসেন শিব মন্দিরে সঙ্গীত সাধনা শুরু করেন। লোকমুখে বলতে শোনা যায়, তার সঙ্গীতে মন্দিরের দেয়াল আন্দোলিত হত। স্থানীয়রা পূর্ণভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে, তানসনের সঙ্গীতের কারণেই মন্দিরটি এক দিকে একটু হেলে পড়েছে। তানসেন সম্বন্ধে আরও কিছু অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন : বৃক্ষ ও পাথরকে আন্দোলিত করা, নিজ থেকেই বাতি জ্বালানো এবং যখন বৃষ্টির কোনো চিহ্নই নেই তখন বৃষ্টি আনয়ন। বাবা-মার মৃত্যুর পর তিনি হযরত গাউসের নিকট আসেন।তিনি একই সাথে তানসেনের সাঙ্গীতিক ও আধ্যাত্মীক গুরু ছিলেন।তবে তানসেন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন কি না তা নির্ভরযোগ্য ভাবে জানা যায় না।এর পক্ষে ও বিপক্ষে দুইদিকেই প্রচুর মত পাওয়া যায়। যাই হোক, শিক্ষা শেষে তিনি মেওয়া বান্ধবগড়ের রাজা রামচন্দ্রের রাজকীয় আদালতে সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি মুঘল বাদশাহ আকবরের রাজ দরবারে নবরত্নের একজন হিসেবে সঙ্গীতের সাধনা শুরু করেন। তানসেনের দুজন স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের খবর পাওয়া যায়।সন্তানদের নাম: হামিরসেন,সুরাটসেন,বিলাস খান,তান্সান্স খান,সরস্বতী দেবী।
গাউসের সমাধি: 
গোয়ালিয়রের মহান সুফি সাধক শেখ মুহাম্মদ গাউসের সমাধি কমপ্লেক্সেই মিয়া তানসেনে সমাধি রচিত হয়েছিল। এখনও এটি বিদ্যমান রয়েছে। শেখ মুহাম্মদ গাউস ষোড়শ শতাব্দীর অন্যতম সুফী দরবেশ ও ফকির ছিলেন। সকল ধর্ম বিশ্বাসের লোকের কাছে তিনি সনামধন্য ছিলেন। গাউস এবং তানসেনের দুইটি সমাধি পাশাপাশি রয়েছে। এছাড়াও এই সমাধি সৌধে অন্যান্য কবর রয়েছে। প্রথাগত মুঘল স্টাইলে এই কমপ্লেক্সটি তৈরি করা হয়েছে। সমাধি ক্ষেত্রটি একটি বিশাল বর্গাকার মাঠের মত যার কেন্দ্র রয়েছে ষড়ভূজ আকৃতির কিছু স্তম্ভ। সমাধি সৌধের দালানগুলোর দেয়ালের মধ্যে পাথর কেটে নকশা করা হয়েছে। দেয়ালের একেক অংশে নকশা একেক রকম। পুরো দালানের উপর বিস্তৃত অংশ জুড়ে একটি বৃহৎ মিনার রয়েছে যা একসময় নীল রঙা টাইল্‌স দ্বারা আবৃত ছিল। সাধু গাউসের সমাধির ডান পাশে তানসেনের সমাধি অবস্থিত। সমাধিটি একটি বর্ধিত আয়তাকার কাঠামোর উপর অবস্থিত। কাঠামোটি মার্বেল পাথর দ্বারা নির্মিত। এর চারদিকে ছাঁইচবিশিষ্ট (eaves) প্যাভিলিয়ন রয়েছে যা বিভিন্ন নকশায় সুশোভিত।
3. বীরবল:
বীরবল
বীরবল (Birbal) অথবা রাজা বীরবল জন্মসূত্রে নাম মহেশ দাস; ১৫২৮–১৫৮৬) মোঘল সম্রাট আকবরের দরবারের অন্যতম সভাসদ ছিলেন। তিনি তাঁর চতুরতার জন্যই তিনি মূলত সকলের কাছে সুপরিচিত। তিনি ব্রাহ্মণ ছিলেন। এবং ১৫৫৬-১৫৬২ সালের দিকে একজন কবি ও গায়ক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি সম্রাটের অত্যন্ত কাছের হয়ে পড়েন এবং নানা সেনা অভিযানে গমন করেন যদিও প্রকৃতপক্ষে তিনি এই বিষয়ে কোনরুপ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন নি। ১৫৮৬ সালের সম্রাট তাকে ভারতের উত্তর-দক্ষিণ দিকে (বর্তমান আফগানিস্তান) পাঠান। কিন্তু এই অভিযান অত্যন্ত শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয় এবং বিদ্রোহী উপজাতিদের আক্রমণে বহু সৈন্যসহ বীরবল মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যু সম্রাটকে অত্যন্ত ব্যথিত করে। ভারতের উত্তর প্রদেশের কল্পি নামক স্থানে ১৫২৮ সালের মহেশ দাস হিসেবে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ফোকলোর অনুযায়ী, স্থানটি যমুনার তীরবর্তী তিকওয়ানপুর। তাঁর পিতা গঙ্গা দাস এবং মাতা অনভা দাবিত। তিনি হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারের তৃতীয় সন্তান।পরিবারটির পূর্ব হতেই কবিতা ও সাহিত্য সম্পর্কে অনুরাগ ছিল। তিনি হিন্দি, সংস্কৃত ও পার্সিয়ান ভাষায় জ্ঞানার্জন করেন। তিনি সংগীত এবং ব্রজ কবিতায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তিনি সংগীতে ছন্দ প্রয়োগের ব্যাপারে অত্যন্ত দক্ষ হয়ে ওঠেন। তিনি তাঁর কবিতা ও গানের কারনে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। তিনি রেবার রাজা রাম চন্দ্রের রাজপুত কোর্টে ব্রাহ্ম কবি নামে কাজ করেন। তাঁর অবস্থার উত্তরণ ঘটে যখন তিনি একটি সম্মানিত এবং ধনী পরিবারের এক কণ্যাকে বিয়ে করেন। ইমপিরিয়াল কোর্টে কাজ করার পূর্বে তাঁর অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না। ধারণা করা হয়, ১৫৫৬ থেকে ১৫৬২ সালের মধ্যে তাঁর সাথে আকবরের প্রথম দেখা হয়। এর কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি সম্রাটের কবি রাই হন। আকবর তাঁকে বীরবল নাম দেন এবং রাজা উপাধীতে ভূষিত করেন। এরপর থেকে তিনি এই নামেই পরিচিত হন। বীরবল নামটি এসেছে বীর বর থেকে যার মানে সাহসী এবং মহান। কিন্তু এই উপাধীটা কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক, কারণ তিনি রণকৌশলে তেমন দক্ষ ছিলেন না। আকবর তাঁর হিন্দু সভাষদদের তাদের ঐতিহ্যানুযায়ী নাম প্রদান করতেন। এস.এইচ হোদিভালা বলেন, এই নামগুলো বেতাল পঞ্চবিংশতী হতে নেয়া হতে পারে। কারণ উক্ত বইয়ের বীর বর নামক এক চরিত্র একজন বিচারককে অনেক সম্মান প্রদর্শন করেন। আকবর সাহিত্য বিষয়ের প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। তিনি সংষ্কৃত ও ভাষার বই পার্সিতে অনুবাদ করতেন। বীরবলের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা তাঁকে সম্রাট আকবরের নয়জন উপদেষ্টা, অর্থাৎ নবরত্নের একজন করে দেয়। অন্যান্য রত্নরা হলেন টোডার মল, মান সিংহ, ভগবান দাস প্রভৃতি। ক্রমেই তিনি একজন ধর্মীয় উপদেষ্টা, সামরিক কর্মকর্তা এবং সম্রাটের নিকট বন্ধু হয়ে পড়েন। সম্রাটকে তিনি প্রায় ৩০ বছর সেবা দান করেন। ১৫৭২ সালে সম্রাট তাঁকে ও এক বিশাল সেনাবাহিনীকে শের আফগান কোয়ালি খানকে তাঁর বড় ভাই হাকিম মির্জার আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য পাঠান। এটিই ছিল তাঁর প্রথম সামরিক অবদান। যদিও তাঁর কোন সামরিক অভিজ্ঞতা ছিল না, তথাপি অন্যান্য উপদেষ্টাদের মত, যেমন টোডার মল অর্থনীতিতে অবদান রাখেন, ঠিক সেইরুপ তাঁকে সম্রাট বিভিন্ন অভিযানের নেতৃত্ব দিয়ে পাঠান। আবুল ফজল এবং আবদুল কাদির বাদওয়ানি কোর্টের ঐতিহাসিক ছিলেন। যদিও ফজল বীরবলকে সম্মান করত এবং তাঁকে প্রায় পঁচিশটি সম্মানজনক উপাধী দেয় ও দু'হাজার অভিযানের নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেন, উগ্র মুসলিম কাদির তার নীচু মানসিকতার জন্য হিন্দু হওয়ায় বীরবলকে সহ্য করতে পারত না। তার সহ্য হত না কেন একজন ব্রাহ্মণ হিন্দু সংগীতশিল্পী হয়ে সে সম্রাটের এত প্রিয় ও বিশ্বাসভাজন হয়ে ওঠে। কিন্তু একই সময়ে আকবরের অন্যান্য মুসলিম সভাষদরা তাঁর প্রতিভা সম্পর্কে অবগত হয়েও তাঁকে পছন্দ করতেন না বলে জানা যায়। আকবর দীন-ঈ-ইলাহি নামের একটি ধর্ম প্রচার করেন। এই ধর্ম হিন্দুধর্ম ও ইসলাম ধর্ম-এর সংমিশ্রণে তৈরি করা হয় এবং এই ধর্মমতে আকবর পৃথিবীতে এই সৃষ্টিকর্তার প্রেরিত মানুষ। আইন-ঈ-আকবরী অনুযায়ী বীরবল আকবর ছাড়া সেই সমস্ত মানুষের একজন ছিলেন যারা এই ধর্ম গ্রহণ করেছিল এবং এই ধর্ম গ্রহণকারী একমাত্র হিন্দু ব্যক্তি। সম্রাটের সাথে বীরবলের সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর ছিল, যদিও তিনি সম্রাটের চেয়ে চৌদ্দ বছরের ছোট ছিলেন। নবরত্নের মধ্যে বীরবল ছিল সবচাইতে দামি রত্ন। বাদওয়ানী একে বিকৃত করে বলে, "তাঁর দেহ আমার দেহ, তাঁর রক্ত, আমার রক্ত"। আকবর দুইবার বীরবলের প্রাণ রক্ষা করেন বলে জানা যায়।
কলকাতার ভিক্টোরিয়া হলে অবস্থিত আকবরী নয় রত্ন-এ দেখা যায়, বীরবল ঠিক আকবরের পরের স্থানেই আছেন। প্রথমে বীরবল সম্রাটকে বিনোদন দিলেও পরবর্তীকালে তাঁকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে পাঠানো হয়। বীরবল সম্রাটের কাছ থেকে একটি দোতলা বাড়ি লাভ করেন, যা সম্রাটের প্রাসাদের সীমানার মধ্যে ছিল। তিনি বীরবলকে কাছে পেয়ে বেশ আনন্দিত ছিলেন এবং তিনিই একমাত্র সভাষদ ছিলেন যিনি সম্রাটের প্রাসাদের চত্বরের মধ্যে স্থান পান। আকবরের প্রাসাদের সাতটি দরজার একটির নাম ছিল বীরবলের দরজা (বীরবলস গেট বা Birbal's Gate)। লোককাহিনীতে তাঁকে সর্বদাই ধার্মিক হিন্দু হিসেবে দেখানো হয়েছে, যিনি আকবরের চেয়ে বয়সে ছোট। বিরুদ্ধভাবাপন্ন মুসলিমরা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে তিনি তাদের বিরুদ্ধে দৃঢ়। তাঁর সাফল্যের কারণ ছিল তাঁর দক্ষতা। এভাবে তিনি তাঁর বুদ্ধিমত্তা এবং ধারালো কথার সাহায্যে সম্রাটের উপর ধর্মীয়, রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত প্রভাব খাটান। যদিও ঐতিহাসিকভাবে তিনি কখনই এমনটা করেননি। বাদওয়ানী তাঁকে অবিশ্বাস করতেন, যদিও তিনি বীরবল সম্পর্কে বলেন, "প্রচুর ক্ষমতা এবং প্রতিভাধর"। ব্রজ ভাষার কবি রাই হোল আকবর এবং তাঁর নবরত্নকে প্রশংসা করেন এবং বীরবলের মহত্বের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। আবুল ফজল তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন মূলত তাঁর আত্মিক গুরুত্ব এবং সম্রাটের বিশ্বাসভাজন হিসেবে, তাঁর চতুরতা কিংবা কবিতার জন্য নয়। আধুনিক হিন্দু ঐতিহাসিকগণ মনে করেন, তিনি আকবরকে বিভিন্ন সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করেছেন এবং সনাতন মুসলিমরা তাঁকে হেয় করতেন কারণ তাঁর কারণে সম্রাট ইসলামকে অবজ্ঞা করতেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি যার কারণে বলা যায় তিনি সম্রাটের ধর্মবিশ্বাসের উপর প্রভাব খাটাতেন। বরং বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় যে তিনি সম্রাটের রাজনীতির উপর বেশ প্রভাব খাটাতেন। বীরবলের প্রতি সম্রাটের ভালবাসা, তাঁর ধর্মীয় সহনশীলতা এবং সামাজিক স্বাধীনতাই এর কারণ ছিল, বীরবল নয়। ইতিহাস অনুযায়ী তিনি আকবরের ধর্মীয় নীতি এবং ধর্ম দীন-ঈ-ইলাহির সমর্থক ছিলেন। আইন-ঈ-আকবরী-এ পতিতা সম্পর্কিত একটি ঘটনায় বীরবলের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে জানা যায়, যেখানে আকবর তাকে শাস্তি দিতে চান কারণ তাঁর মত একজন ধার্মিক ব্যক্তির পক্ষে এমন কাজ বিশেষভাবে লজ্জাজনক।
ভারতের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে আফগানিস্তানের ইন্দু নদীর তীরে ইউসুফজাই উপজাতি মোঘল শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। ১৫৮৬ সালের অনেক সৈন্য হতাহতের পর আকবর তাঁর নতুন দুর্গ এটক হতে বীরবলকে এক সেনাদলের সাথে উক্ত স্থানে কমান্ডার জইন খানকে সাহায্য করার জন্য পাঠান। বীরবল পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হন। কিন্তু আফগানরা আগে থেকেই সেখানে প্রস্তুত হয়ে ছিলেন। এক মারাত্মক হামলায় বীরবল সহ প্রায় ৮০০০ সৈন্য উক্ত স্থানে মারা যান এবং বীরবলের দেহ আর কখনই খুঁজে পাওয়া যায়নি। এটি ছিল আকবরের সর্ববৃহৎ সামরিক ব্যর্থতা এবং সেনা ধ্বংসের ঘটনা। এই ঘটনার ফলশ্রুতিতে আকবর প্রচন্ড শোকাহত হন এবং তাঁর সবচেয়ে প্রিয় সভাষদের মৃত্যুতে তিনি টানা দুইদিন কোনরুপ খাদ্য কিংবা পানীয় গ্রহণ করেননি। তিনি আরো বেশি যন্ত্রণাকাতর হন কারণ হিন্দু শবদাহ রীতির ফলে তিনি বীরবলের দেহ আর কোনদিনই দেখতে পাননি। তিনি এই ঘটনাকে তাঁর সিংহাসন লাভের পর সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটয়না বলে অভিহিত করেন। বাদওয়ানী লেখেন, সম্রাট বীরবলের মৃত্যুর পর যে সম্মান দেখান, আর কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মৃত্যুর চেয়ে অনেক বেশি। তিনি বলেন, "হায়! ওরা ওর দেহটাও ফিরিয়ে আনতে পারল না, তাহলে তা দাহ করা যেত।" কিন্তু শেষে তিনি নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দেন যে বীরবল এখন সকল পার্থিব প্রতিবন্ধকতা হতে সম্পূর্ণ মুক্ত এবং স্বাধীন। এবং তাঁর জন্য সূর্যরশ্মিই যথেষ্ট, তাঁকে আগুনে পোড়াবার কোন প্রয়োজন নেই। আকবরের শাসনামলের প্রায় একশ' বছর পর এক গল্পগুলোর উদ্ভব হয়। মোঘল বীরদের জীবনী মহাথীর আক-উমরা-এ বীরবলকে তাঁর কাব্য এবং চতুরতার জন্য উন্নত ভাগ্যের অধিকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তাঁর চতুরতার প্রশংসা করা হয় এই বলে যে তাঁর বুদ্ধিমত্তা সেই সময়ে উত্তর ভারতে ক্রমশ জনপ্রিয় হয় কারণ তখন আকবরের কারণে মোঘল শাসন কিছুটা সাম্যাবস্থায় এসেছে। একইভাবে, রাজা এবং তাঁর প্রত্যুৎপন্নমতি মন্ত্রীদের কাহিনী ভারতে এর আগে থেকেই জনপ্রিয়। তন্মধ্যে তেনালী রমন ও রাজা বিজয়নগর এবং গোপাল ভাঁড় ও নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র উল্লেখযোগ্য। বীরবলের কাহিনীগুলো নানা ভঙ্গিতে বলা হয় যার একটি বলা হয় আরব্য রজনীর মত করে। কয়েক বছর পরে মোল্লা দো পেঁয়াজার উদ্ভব ঘটে। এগুলো ১৯০০ সালের দিকে লেখেন এক মুসলিম লেখক। তিনি আকবরের সময়কার এক পার্সিয়ান ব্যক্তি থেকে অনুপ্রানিত হন। তিনি ছিলেন বীরবলের কাহিনীগত মুসলিম প্রতিরুপ এবং সনাতন মুসলিম ধর্মীয় প্রবক্তা এক চরিত্র। কিছু গল্পে তিনি আকবর ও বীরবল দুজনকেই উৎকৃষ্ট হিসেবে দেখিয়েছেন, আবার কিছু গল্পে তাঁকে অযত্নে দেখানো হয়েছে। সি.এম. নাঈম লেখেন যে, এই কাহিনীগুলোকে ঐতিহাসিক প্রমাণ হিসেবে দেখা উচিত নয়। তবে এরা তখনকার রাজনৈতিক ইতিহাসকে দেখিয়েছে। "আকবর ও বীরবল" কাহিনীগুলো একজন হিন্দু কথকের মোঘল শাসনের প্রতি পক্ষপাত দেখায়। আকবরকে এই কাহিনীগুলোতে কিছুটা খারাপ হিসেবে দেখানো হয় এবং বীরবল সর্বদাই শ্রেষ্ঠ হয়। প্রতিটিবারেই সেখানে একজন শক্তিশালী শাসক থাকেন যিনি অত্যন্ত শক্তিশালী ভাবে তাঁর শাসন কাজ করছিলেন। তাঁর সাথে একজন হাস্য-রসাত্মক মন্ত্রী থাকতেন যার চতুরতা অত্যন্ত ধারালো এবং যার জনপ্রিয়তা কিংবদন্তিতুল্য ছিল। এই রসিকতা এবং কাহিনীগুলো আকবরসহ প্রায় সকল শক্তিশালী শাসককে নিয়েই হয়েছে, কারণ তিনি মানুষকে অনুপ্রাণিত করতেন, তাঁদের সাথে অনেক বেশি মিশতেন। নাঈম আরো বলেন যে অন্য কোন সভাষদকে না নিয়ে বীরবলকে নেয়ার কারণ হচ্ছে তিনি একজ ব্রাহ্মণ যিনি ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী এক চরিত্র। এই কাহিনীগুলো মূলত মুখে মুখে চলে এসেছে। এতে গুরত্ব দেয়া হয় কিভাবে সে অন্যান্য বিরোধী সভাষদদের টেক্কা দেয়, যারা তাঁকে সম্রাটের চোখে খাটো করতে চাইত। সাধারণত সে হাস্যকরভাবে এবং তীক্ষ্ণ ও বুদ্ধিমান উত্তর দিয়েই সমস্যার সমাধান করত। শেষে আকবর অবাক হতেন এবং মজা পেতেন। কিছু গল্পে আকবরই বীরবলকে একটি কবিতার লাইন দিয়ে কবিতাটি শেষ করতে বলতেন এবং কিছু গল্প সাধারণ হাস্যরসাত্মক। প্রায় অসম্ভব এক পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে বীরবল কিভাবে তা অতিক্রম করতেন বস্তুত তাই এই কাহিনীগুলির মূল বিষয়। আকবর ও বীরবলের গল্পগুলো অমর চিত্র কথা ও চাঁদমামা বইয়ে গ্রন্থিত হয়েছে। শিশুতোষ বই এবং আরো নানা কমিক বইয়েও এই কাহিনীগুলোকে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া বেশকিছু পেপারব্যাক মুদ্রণ, চলচ্চিত্র, পাঠ্যবই, বইয়ের তালকা এবং নাটকেও এই চরিত্রগুলো মুখ্য। ভারতের টিভি চ্যানেল কার্টুন নেটওয়ার্ক ছোটা বীরবল ও আকবর অ্যান্ড বীরবল নামের দুটো টেলিভিশন ধারাবাহিক প্রচার করেছে। সালমান রুশদির উপন্যাস দ্য এন্‌চ্যান্ট্রেস অফ ফ্লোরেন্স-এ বীরবল চরিত্রটি আছে।
4. আবুল ফজল
5. কবি ফৈজি
6. আব্দুল রহিম খান
7. ফকির আজিওদ্দিন
8. সেনাপতি মানসিংহ
9. মোল্লা দো-পিঁয়াজা

পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ: 
হেমুর পরাজয়, আকবরনামা থেকে নেয়া পানিপতীর দ্বিতীয় যুদ্ধের বিজয়ের ছবি, ১৫৯০-এর দশকের অঙ্কন
পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ হয়েছিল ১৫৫৬ সালের ৫ নভেম্বর হিন্দু জেনারেল ও আদিল শাহ সুরির প্রধানমন্ত্রী হেমুর বাহিনী এবং মুঘল বাদশাহ আকবরের বাহিনীর মধ্যে। দিল্লীর যুদ্ধে তারদি বেগ পরিচালীত মুঘলদের পরাজিত করে হেমু এক মাস আগেই দিল্লী জয় করেছিলেন এবং নিজেকে রাজা বিক্রমাদিত্য ঘোষণা করেছিলেন। আকবর এবং তার অভিভাবক বৈরাম বেগ শহর পুনরুদ্ধার করার জন্য দ্রুত দিল্লী পৌছেছিলেন। ১৫২৬ সালের প্রথম পানিপথের যুদ্ধের স্থানের অদূরবর্তী পানিপথে দুই সেনাবাহিনী যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। যদিও যুদ্ধের আগেই হেমু তার গোলন্দাজ বাহিনী হারিয়েছিল, তার বাহিনী সংখ্যায় বেশী ছিল। যুদ্ধের মাঝে হেমু তীর লেগে আহত হয়েছিলেন এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন। তাঁকে পড়ে যেতে দেখে তার সেনাদল আতঙ্কিত হয়ে হয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। হেমু ধরা পড়ে এবং পরে তার শিরোচ্ছেদ করা হয়েছিল। আকবরের সুস্পষ্ট বিজয়ের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শেষ হয়েছিল। মূঘল সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবরের উত্তরসূরি হুমায়ূন রাজত্ব হারিয়েছিলেন যখন ১৫৪০ সালে সূর সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা শের শাহ সূরি তাকে ভারতের বাইরে বিতাড়িত করেছিল। দিল্লী এবং আগ্রার পতন হয়েছিল শের শাহর হাতেই। পরবর্তীতে ১৫৪৫ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর উত্তরসূরী হয় ছোট ছেলে ইসলাম শাহ সূরি, যিনি ছিলেন একজন দক্ষ শাসক। ১৫৫৩ সালে তাঁর মৃত্যুর পর সূর সাম্রাজ্য উত্তরাধিকার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন এবং বিদ্রোহী ও প্রদেশসমুহের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন। হারানো রাজত্ব ফিরে পেতে হুমায়ূন এই বিবাদ কাজে লাগিয়েছিলেন এবং ১৫৫৫ সালের ২৩শে জুলাই মুঘলরা সিকান্দার শাহ সুরি কে পরাজিত করে, এবং সবশেষে দিল্লী ও আগ্রার উপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়। ইসলাম শাহ সূরির আইনসঙ্গত উত্তরাধিকারি, তার ১২ বছর বয়সী ছেলেকে তার মামা হত্যা কর এবং আদিল শাহ সুরি হিসাবে সিংহাসনে বসেছিলেন। যদিও নতুন শাসক রাজ্যের সমস্যার চেয়ে আনন্দজনক কাজে বেশি আগ্রহী ছিলেন। ওসব কাজ বেশিরভাগই রেওয়ারি থেকে আগত একজন হিন্দু, হেমুকে দেওয়া হতো যিনি সামান্য অবস্থা থেকে আদিল শাহর প্রধানমন্ত্রী এবং সূরি সেনাবাহিনীর জেনারেল হয়েছিলেন। ১৫৫৬ সালের ২৬ জানুয়ারি যখন হুমায়ূন মারা যান, তিনি বাংলায় ছিলেন। মুঘল বাদশাহর মৃত্যু মুঘলদের পরাজিত করার ও হারানো অঞ্চল পুনরুদ্ধার করার আদর্শ সুযোগ করে দিয়েছিল। হেমু বাংলা থেকে দ্রুত যাত্রা করেছিলেন এবং মুঘলদের বায়ানা ,ইতাহা,সাম্ভাল,কালপি এবং নারাউল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। আগ্রাতে প্রশাসক শহর ত্যাগ করেছিলেন এবং হেমুর আসন্ন হামলার সংবাদ পেয়ে যুদ্ধ না করে পালিয়ে গিয়েছিলেন, প্রশাসকের পিছু ধাওয়া করে হেমু দিল্লীর ঠিক বাইরে তুঘলাকাবাদে পৌছে যান, যেখানে তিনি মুঘল প্রশাসক তারদি বেগ খানের সেনাবাহিনীর দেখা পান এবং তুঘলাকাবাদের যুদ্ধে তাদের পরাজিত করেন। ১৫৫৬ সালের ৭ অক্টোবরের যুদ্ধের পর তিনি দিল্লী দখল করেছিলেন এবং বিক্রমাদিত্য (বিক্রমজিৎ) উপাধি ধারণ করে রাজকীয় মর্যাদা দাবী করেছিলেন। তুঘলাকাবাদ থেকে বিপর্যয়ের সংবাদ পেয়ে, হুমায়ূনের উত্তরসূরি ১৩ বছরের আকবর ও তার অভিভাবক বৈয়ারাম খাঁ দ্রুত দিল্লীর দিকে যাত্রা করেন। ভাগ্যে ভালো থাকায়, আলি কুলি খান সাইবানি (পরে খান-ই-জামান) দৈবাৎ হেমুর কামানের দেখা পেয়ে যান দূর্বল প্রহরার মধ্যে। সাইবানিকে ১০,০০০ অশ্বারোহী সেনার দলসহ আগে পাঠানো হয়েছিল। তিনি আফগানদের কাছ থেকে কামানের পুরো চালান দখল করে নিতে সক্ষম হন। এর মধ্যে যারা অস্ত্র পরিত্যাগ করেছিল এবং যুদ্ধ না করে পালিয়ে গিয়েছিল তারাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এটা হেমুর জন্য এক বড় ক্ষতি হিসাবে প্রমাণিত হয়েছিল। ১৫৫৬ সালের ৫ নভেম্বর মুঘল সেনাদল হেমুর সেনাদলের সাথে ঐতিহাসিক পানিপথের যুদ্ধক্ষেত্রে মুখোমুখি হয়েছিল। আকবর এবং বৈয়ারাম খাঁ, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আট মাইল দূরে পিছনে ছিলেন। মধ্যখানে আলি কুলি সাইবানির ১০০০০ অশ্বারোহী সেনার দল,ডানে সিকান্দার খান উজবাক এবং বামে আবদুল্লাহ খান উজবাক মুঘল সেনাবাহিনী কে নেতৃত্ব দিয়েছিল।অগ্রগামী সেনাদলকে নেতৃত্ব দিয়েছিল হুসাইন কুলি বেগ ও শাহ কুলি মাহরাম এবং তুর্কদের থেকে বৈয়ারাম খার বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করা হয়েছিল। আফগান ঘোড়সওয়ারি নিয়ে গঠিত প্রথম শ্রেনীর ৩০,০০০ শক্তিশালী অশ্বারোহী সেনার দল ও ৫০০ হাতীর হস্তীবাহিনী হিসাব করলে হেমুর সেনাদল সাংখ্যিকভাবে উন্নত ছিল। প্রত্যেকটি যোদ্ধা হাতী ধাতব বর্মে সুরক্ষিত ছিল এবং তাদের পিঠে মাসকেটিয়ার ও ক্রসবোম্যান ছিল। হাওয়াই নামের হাতীর পিঠে চড়ে, হিমু তার সেনাদলকে নিজেই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর বামপাশে বোনের ছেলে রাময়া এবং ডান পাশ শাদি খান কাক্কার নেতৃত্ব দিয়েছিল। তাঁর সেনাদল অভিজ্ঞ ও প্রচুর আত্মবিশ্বাসী ছিল এবং হেমু সেই সময়ে আদিল শাহর হয়ে ২২ টি যুদ্ধে জয় লাভ করেছিলেন।যদিও এ যুদ্ধে হেমুর কোন গোলন্দাজ বাহিনী ছিল না। হেমু আক্রমন শুরু করেছিলেন এবং মুঘলদের ডান ও বাম অংশের উপর হাতি ছেড়ে দিয়েছিলেন।যে সব সৈন্য এই গন্ডগোল এড়াতে পেরেছিল,তারা পিছু হটার বদলে পাশে চেপে গিয়েছিল এবং তাদের উন্নত ধনুর্বিদ্যার সাহায্যে তীর বর্ষণ করে, হেমুর অশারোহী সেনাবাহিনীর পার্শ্বদেশ আক্রমন করেছিল। মুঘলদের মধ্যভাগ এগিয়ে এসেছিল এবং একটি গভীর গিরিখাতের আগে রক্ষনাত্মক অবস্থান নেয়। হেমুর হাতী বা অশ্ববাহিনী কেউই প্রতিপক্ষের নাগাল পেতে খাত অতিক্রম করতে পারেনি এবং অন্য পক্ষ থেকে ছোড়া ছুটন্ত অস্ত্রের আঘাতের জন্য নাজুক অবস্থায় ছিল। ইতোমধ্যে মুঘল অশ্বারোহি সেনাবাহিনী তাদের দ্রুতগামি বাহনে চড়ে পাশ থেকে ও পেছন থেকে হেমুর সৈন্য বাহিনীর ভেতর ঢুকে পড়েছিল এবং বিশাল পশুটির পায়ে খোঁচা মেরে বা মাহুতকে ফেলে দিয়ে হাতিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা আরম্ভ করেছিল। হেমু তার হাতীকে টেনে থামিয়ে ছিলেন এবং আফগান আক্রমনের তীব্রতা হ্রাস পায়।

আফগান আক্রমন শিথিল হয়ে যাচ্ছে দেখে আলি কুলি খান চারিদিক ঘুরে এবং পেছন দিক থেকে আফগান মধ্যভাগে আক্রমনের জন্য তার অশ্বারোহী সেনাদলকে নির্দেশ দেন। হাওয়াই এর উপর হাওদায় বসে যুদ্ধ পর্যবেক্ষন করে আক্রমন প্রতিহত করার জন্য ব্যাস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। সাদি খান কাক্কর এবং তার আরেকজন যোগ্য সেনাপতি ভগবান দাসকে পরাজিত দেখার পরও তিনি মুঘলদের বিরুদ্ধে প্রতি-আক্রমনে নেতৃত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন এবং তার হাতীকে বাধা দিতে আসা যে কাউকে সরিয়ে দিচ্ছিলেন। এটা ছিল বেপোরোয়া ভাবে লড়াই করা যুদ্ধ; কিন্তু মনে হয়েছিল যুদ্ধের প্রাধান্য হেমুর দিকে ঝুকে পড়েছে, মুঘল সেনাবাহিনীর উভয় অংশকেই পিছনের দিকে খেদিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং তাদের মধ্যভাগকে গুড়িয়ে দেওয়ার জন্য হস্তীবাহিনী ও অশ্বারোহী সেনাদলকে সামনে চালনা করেছিলেন। হেমু যখন সম্ভাব্য বিজয়ের চূড়ায়,মুঘলদের ছোড়া একটি তীর দৈবাৎ তার চোখে আঘাত করে আহত করেছিল এবং তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। তাকে পড়ে যেতে দেখে তার সেনাবাহিনীর ভেতর আতঙ্কের সূত্রপাত হয়েছিল যা বিন্যাস ভেঙে গিয়েছিল এবং তারা পালিয়ে গিয়েছিল। যুদ্ধে হার হয়েছিল; যুদ্ধের ময়দানে ৫০০০ লাশ পড়েছিল এবং পালানোর সময় আরো অনেককে হত্যা করা হয়েছিল।
"দুই সেনাদল এমন সংঘর্ষ করেছিল

যে তারা পানির ভেতর থেকে আগুন উদিত করেছিল;
তু্মি বলবে বাতাস ছিল টকটকে লাল ছুরির মত,
তাদের সব তরবারি নিরেট রুবিতে পরিণত হয়েছিল।"

_আবুল ফজল, আকবরনামা
আহত হেমু কে বহনকারী হাতীটিকে ধরা হয়েছিল এবং মুঘলদের আস্তানায় আনা হয়েছিল।বৈয়ারাম খা ১৩ বছর বয়সি আকবরকে হেমুর শিরোচ্ছেদ করতে বলেছিলেন,কিন্তু তিনি মৃত্যুপথযাত্রীর উপর তরবারি উঠাতে অরাজি ছিলেন।হেমুর মাথা তরবারি দিয়ে স্পর্শ করতে আকবরকে প্ররোচিত করা হয়েছিল,এরপরই বোইয়ারাম খা তাকে হত্যা করেছিলেন। হেমুর মাথা কাবুলে পাঠানো হয়েছিল যদিও তার দেহ দিল্লীর একটি প্রবেশদ্বারে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।অন্যান্য মৃতদের মাথা দিয়ে পরবর্তিকালে একটি মিনার নির্মিত হয়েছিল। হেমুর সমর্থকরা পরে পানিপথের যেখানে হেমুকে শিরোচ্ছেদ করা হয়েছিল সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছিল। এটি এখন হেমুর সমাধি স্থান হিসাবে পরিচিত। হেমুর মৃত্যুর পর,আদিল শাহর সৌভাগ্যও খারাপের দিকে মোড় নিয়েছিল। ১৫৫৭ সালের এপ্রিলে বাঙলার মুহাম্মাদ শাহর ছেলে খিজির খান তাকে পরাজিত ও হত্যা করেছিল, পানিপথের যুদ্ধ থেকে অর্জিত মালের মধ্যে হেমুর ১২০ টি হাতি যাদের বিধ্বংসী ক্ষমতা মুঘলদের এতই মুগ্ধ করেছিল যে প্রানিগুলো তাদের সামরিক কৌশলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গিয়েছিল।
লাহোর দুর্গ:
১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে লাহোর দুর্গ ও হাজুরি বাগ প্যাভেলিয়ন

লাহোর দুর্গ ( شاہی قلعہ ) (স্থানীয়ভাবে শাহী কিল্লা বলে পরিচিত) পাকিস্তানের পাঞ্জাবের লাহোরে অবস্থিত একটি দুর্গ।এই দুর্গ ইকবাল পার্কে লাহোরের দেয়ালঘেরা শহরের উত্তরপশ্চিমে অবস্থিত। এই পার্ক পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় নগর পার্কের অন্যতম। ট্রাপোজয়েড আকৃতির স্থানটি ২০ হেক্টর এলাকা নিয়ে গঠিত। দুর্গের উৎস প্রাচীনকাল হলেও বর্তমান স্থাপনা মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনামলে নির্মিত হয়েছে। পরবর্তীতে মুঘল সম্রাটদের সময়ে দুর্গের বৃদ্ধি ঘটেছে। মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পর শিখ ও ব্রিটিশ শাসকরাও দুর্গের বৃদ্ধি ঘটান। এর দুইটি ফটক রয়েছে। এর মধ্যে একটি সম্রাট আওরঙ্গজেব নির্মাণ করেছেন। এটি আলমগিরি ফটক বলে পরিচিত এবং তা বাদশাহী মসজিদমুখী। অন্যটি আকবরের সময় নির্মিত হয় এবং এটি মাসিতি বা মসজিদি ফটক নামে পরিচিত। এটি দেয়ালঘেরা শহরের মাসিতি এলাকামুখী। বর্তমানে আলমগিরি ফটকটি প্রধান প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং মাসিতি ফটকটি স্থায়ীভাবে বন্ধ রয়েছে। দুর্গে মুঘল স্থাপত্যের উৎকৃষ্ট নিদর্শন রয়েছে।
লাহোর দুর্গের ভূমি পরিকল্পনার মানচিত্র, ১৯১১
দুর্গের কিছু বিখ্যাত স্থানের মধ্যে রয়েছে শিশ মহল, আলমগিরি ফটক, নওলাখা প্যাভেলিয়ন ও মোতি মসজিদ। ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে শালিমার উদ্যানের পাশাপাশি এই দুর্গ ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত হয়। এক্সপো ২০১০ এ পাকিস্তানের প্যাভেলিয়ন দুর্গের রেপ্লিকা হিসেবে তৈরি করা হয়েছে।

মুঘল ও মুঘল-পূর্ব‌ যুগ: 
আনু. 1910s হেমু বিক্রমাদিত্যের ছবি
লাহোর দুর্গের উৎস স্পষ্ট নয় এবং তা সাধারণত বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী নির্ভর কে সর্বপ্রথম এই দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন তা জানা যায় না। কিছু হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীতে রামের পৌরাণিক পুত্র লোহকে এর প্রতিষ্ঠার সাথে সম্পর্কিত করা হয়। এ বিষয়ে প্রথম ঐতিহাসিক বিবরণ ১১শ শতাব্দীতে সুলতান মাহমুদ গজনভির সময় পাওয়া যায়। এটি ছিল একটি কাদা দিয়ে তৈরী দুর্বল দুর্গ এবং তা তখন ধ্বংস হয়ে যায়। পুরনো সূত্র অনুযায়ী ১২৪০ এর দশকে মঙ্গোলরা এই দুর্গ ধ্বংস করে। এর প্রায় ৫০ বছর পর গিয়াসউদ্দিন বলবন এখানে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। ১৩৯৯ খ্রিষ্টাব্দে তৈমুরের আক্রমণে এই দুর্গ পুনরায় বিধ্বস্ত হয়। এর ২০ বছর পর সুলতান মুবারক শাহ সৈয়দ এটি পুনর্নির্মাণ করেন। ১৪৩০ এর দশকে কাবুলের শেখ আলি এই দুর্গ দখল করেন। দুর্গের বর্তমান স্থাপনা মুঘল আমলের। ১৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দে মুঘল সম্রাট আকবর দুর্গটি দখল করেন। এটি সাম্রাজ্যের উত্তরপশ্চিম সীমান্ত রক্ষার কাজে ব্যবহৃত হত। তিনি ইট ও চুনাপাথর দিয়ে দুর্গ পুনর্নির্মাণ করেন। সময় পরিক্রমায় এতে প্রাসাদ নির্মিত হয় এবং এতে যুক্ত বাগান এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। আকবর কর্তৃক নির্মিত অন্যান্য স্থাপনার মধ্যে রয়েছে দৌলত খানা-এ-খাস-ও-আম, ঝারোকা-এ-দারশান, ও মাসজিদি ফটক। পরের সম্রাটদের সময় তার স্থাপনাগুলো প্রতিস্থাপিত হয়। শাহজাহান শাহ বুরুজ, শিশ মহল ও নওলাখা প্যাভেলিয়ন নির্মাণ করেছেন। তার পুত্র আওরঙ্গজেব আলমগিরি ফটক নির্মাণ করেছেন। এর দুইপাশে গম্বুজযুক্ত প্যাভেলিয়নসহ অর্ধ‌-গোলাকার টাওয়ার রয়েছে।
শিখ যুগ:
১৭৫৮ রঘুনাথরাওয়ের নেতৃত্বে মারাঠা বাহিনী এই দুর্গ দখল করে। এরপর বানগি শিখ রাজবংশ (১৭১৬-১৮১০) ১৭৬০ থেকে ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত লাহোর শাসন করেছে। এরপর রণজিৎ সিং বানগিদের হাত থেকে লাহোরের নিয়ন্ত্রণ হস্তগত করেন। লাহোর দুর্গও তার হাতে আসে। ১৮০১ খ্রিষ্টাব্দে তাকে সমগ্র পাঞ্জাবের সম্রাট ঘোষণা করা হয়। ১৭৯৯ থেকে ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দে শিখ সাম্রাজ্যের পতনের আগ পর্যন্ত এই দুর্গ রণজিৎ সিং, তার পুত্র, নাতি ও স্ত্রীদের হাতে ছিল।

সাম্প্রতিক সময়:
১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে দিওয়ান-ই-আমের সম্মুখে খননকার্যের সময় ১০২৫ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান মাহমুদ গজনভির সময়কার একটি স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া যায়। এটি জমি থেকে প্রায় ২৫ ফুট (৭.৬ মি) নিচে পাওয়া যায়। ১৫ ফুট (৪.৬ মি) গভীর পর্যন্ত এর সাংস্কৃতিক স্তর বিস্তৃত ছিল যা থেকে বোঝা যায় যে তার বিজয় অভিযানের পূর্বে‌ও এখানে জনবসতি ছিল। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে আকবরি ফটকের মেঝেতে কাজ চলার সময় ব্রিটিশ, শিখ ও মুঘল যুগের তিনটি মেঝে উম্মোচিত হয়। এগুলো যথাক্রমে ইট, পোড়ানো ইট ও পাথরে নির্মিত। শেষেরটি জাহাঙ্গীর বা শাহজাহানের সময় নির্মিত হয় এবং তা মুঘল নিদর্শন। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে কর্মকর্তারা ইউনেস্কোকে বিপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকা থেকে দুর্গের নাম বাদ দিতে অনুরোধ করেছেন কারণ নরওয়ে, হংকং, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স এর সংস্কারের জন্য অর্থ সহায়তা দিয়েছে। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কো দুর্গে কোনো রাষ্ট্রীয় বা ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান না করার জন্য পাঞ্জাব প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগকে নির্দেশ দিলেও এখানে সে বছরের ২৩ ডিসেম্বর একটি বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের পুরাতত্ত্ব আইন অনুযায়ী ঐতিহাসিক স্থানের সুরক্ষার জন্য এসব স্থানের ব্যবহার নিষেধ। কিন্তু পরের মাসে দিওয়ান-ই-খাসে একটি ভোজের আয়োজন করা হয়। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে দুর্গ প্রাঙ্গণে শিখ শিল্পকর্মে‌র প্রদর্শ‌নী হয়। এই প্রদর্শনীর নাম ছিল গ্লোরিয়েস শিখ হেরিটেজ আন্ডার দ্য রুফ। রণজিৎ সিংয়ের আমলের দুর্লভ শিল্পকর্ম, ব্রিটিশ ও শিখদের মধ্যকার চুক্তির দলিল, অস্ত্র ও অলংকার প্রদর্শনীতে রাখা হয়।
আকবরের সমাধি: সিকান্দ্রা, আগ্রা
আকবরের পত্নীগণ:
1. মারিয়াম-উজ-জামানি বেগম
2. রুকাইয়া সুলতান বেগম
3. সেলিমা সুলতান বেগম
4. বেগম রাজ কানয়ারি বাই
5. বেগম নাথি বাই
6. কুশমিয়া বানু বেগম
7. বিবি দৌলত শাদ বেগম
8. রাজিয়া সুলতান বেগম
আরোও পাঁচজন স্ত্রী
আকবরের বংশধর:
1. হাসান
2. হুসাইন
3. জাহাঙ্গীর
4. মুরাদ
5. দানিয়েল
6. আরাম বানু বেগম
7. শাকার-উন-নিসা বেগম
8. শেহজাদী খানুম
আকবরের পূর্ণ নাম: মির্জা আব্দুল-ফথ জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর
আকবরের রাজবংশ: মোঘল রাজবংশ
আকবরের পিতা: হুমায়ুন
আকবরের মাতা: হামিদা বানু বেগম
.
.
.
Source:
1. https://www.bbc.com/bengali/news-38977756
2. https://roar.media/…/col…/main/history-of-the-mughal-empire/
3. https://www.somewhereinblog.net/blog/axamulalom/30161426
4. http://www.ebookbou.edu.bd/…/SSHL/BABSS/bhi_3302/Unit-01.pdf
5. http://brahmanbaria24.com/
6. https://bn.wikipedia.org/

Comments

Popular posts from this blog

গুপ্ত, গৌড়, সেন, পাল ও দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার রাজবংশসমূহ

পূর্ব ভেইল নীহারিকা